October 6, 2025, 9:46 pm

লাকসামে বিশ্ব শিশু দিবসে বাস্তব চিত্র: হারিয়ে যাওয়া শৈশবের গল্প

Reporter Name
  • Update Time : Monday, October 6, 2025
  • 13 Time View

জি.এম.এস রুবেল, লাকসাম (কুমিল্লা):

ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙে চৌদ্দ বছরের মো. শামিমুলের। অন্যদের মতো বই-খাতা হাতে স্কুলে যাওয়ার নয়, তার হাতে থাকে চায়ের ট্রে, থালা-বাটি আর ঝাড়ু। লাকসাম শহরের বাইপাস এলাকার এক ছোট হোটেলে তার প্রতিদিনের শুরু হয় কড়া চায়ের গন্ধে, আর শেষ হয় গভীর রাতের ক্লান্তিতে।

ক্লান্ত মুখে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, স্কুলে যাও না কেন?—
সে মৃদু হেসে বলে,

“খাওয়া পাই, থাকবার জায়গা পাই, তাতেই তো ভাগ্য। স্কুলে যাই না, খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই বাবার।”

তার বাবা একটি টেইলরের দোকানে কাজ করেন। তিন ভাই ও এক বোনের সংসারে শামিমুল সবার বড়। দায়িত্বের ভার কাঁধে নিয়ে সে মাত্র এক সপ্তাহ হলো এই হোটেলে কাজ শুরু করেছে। বয়স চৌদ্দ, অথচ চোখে মুখে বয়সের চেয়ে অনেক বড় এক ক্লান্তি। তবু ছোট্ট একটা স্বপ্ন বুকে লালন করে সে— “একদিন নিজের একটা হোটেল হবে।”

কিন্তু সেই স্বপ্নের পেছনে যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া শৈশব, তা কেউ দেখার সময় পায় না।

আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ব শিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— “শিশুর কথা বলব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ।” কিন্তু বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাগে— এই কথাগুলো কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাচ্ছে না তো?

লাকসামের রাস্তায়, চায়ের দোকানে, গাড়ির গ্যারেজে কিংবা ইটভাটার পাশে তাকালেই দেখা মেলে শত শত শিশুর। কেউ বাসন মাজছে, কেউ ট্রে হাতে দৌড়াচ্ছে, কেউ আবার মেশিনের গরম চুল্লির পাশে ঘাম ঝরাচ্ছে। বইয়ের পাতায় শিখতে পারছে না তারা, জীবন নামের কঠিন পাঠটাই শিখছে ছোটবেলা থেকেই।

দারিদ্র্য, পারিবারিক অস্থিরতা আর সমাজের উদাসীনতা তাদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে নির্মমভাবে। এই শিশুরা শুধু শ্রম দিচ্ছে না— তারা হারাচ্ছে তাদের হাসি, তাদের স্বপ্ন, তাদের রঙিন শৈশব।

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,

“শিশুদের হাসিখুশি মুখই নতুন বাংলাদেশের আশার প্রতীক। তাদের স্বপ্ন ও সৃজনশীলতা দিয়েই গড়ে উঠবে আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদের অঙ্গীকার হোক— প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ শৈশব, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করা।”

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়— শামিমুলের মতো শিশুদের মুখে সেই হাসি কবে ফিরবে?
শিশুরা যেখানে খেলবে, হাসবে, গান গাইবে— সেখানে তারা আজ কাজ করছে বেঁচে থাকার তাগিদে।

একটু সচেতনতা, সামান্য সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধ— এতটুকুই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে তাদের জীবনে।
হয়তো তবেই কোনো এক ভোরে, হোটেলের ধোঁয়ার গন্ধে নয়, স্কুলের ঘণ্টাধ্বনিতে ঘুম ভাঙবে শামিমুলের মতো শিশুদের…


প্রিন্ট

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category